বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 10:56 pm
October 29, 2025 10:56 pm

জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হত্যা: প্রেম-অভিমান থেকে পরিকল্পিত খুন, আদালতে বর্ষাসহ তিনজনের স্বীকারোক্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড় এসেছে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নিহতের ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা, তার প্রেমিক মাহির রহমান, ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান। মঙ্গলবার ঢাকার পৃথক তিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

একই ঘটনায় আসামিদের বন্ধু প্রীতম চন্দ্র দাস সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং সাক্ষী প্রীতমকে পরিবারের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

আদালতে চার ভিন্ন জবানবন্দি, উঠে এসেছে প্রেমের টানাপোড়েন

তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আশরাফ হোসেন আদালতে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করলে পৃথক আদালতে শুনানি হয়।

  • মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়ার আদালতে বর্ষা,

  • মেহেদী হাসানের আদালতে মাহির,

  • জুয়েল রানার আদালতে আয়লান,
    এবং হাসিবুজ্জামানের আদালতে সাক্ষী হিসেবে প্রীতম জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, বর্ষার সঙ্গে মাহিরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রায় দেড় বছর। অন্যদিকে বর্ষার শিক্ষক হিসেবে জোবায়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে এক বছর আগে, যা পরে প্রেমে রূপ নেয়। এ সম্পর্ক টের পেয়ে ক্ষুব্ধ হন মাহির।

বর্ষার প্ররোচনায় খুনের পরিকল্পনা

তদন্তে জানা গেছে, বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে বারবার ঝগড়ার পর বর্ষা এক পর্যায়ে মাহিরকে বলেন,

“স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর তাকে সহ্য করতে পারছি না।”

এরপর দুজন মিলে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বর্ষা নিয়মিত জানাতেন জোবায়েদ কখন পড়াতে আসেন এবং কখন ফেরেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহির ও তার বন্ধু আয়লান দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর বউবাজার এলাকায় গিয়ে ৫০০ টাকায় একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।

টিউশনি করতে এসে খুন

গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে, বরাবরের মতো বর্ষাকে পড়াতে যান জোবায়েদ। ঢাকার বংশাল থানাধীন নুর বক্স লেনের রৌশান ভিলা ভবনে ঢোকার পরই নিচতলায় ওত পেতে থাকা মাহির ও আয়লান তার পথরোধ করে।

তারা জোবায়েদকে প্রশ্ন করে—“বর্ষার সঙ্গে সম্পর্ক কেন?” উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মাহির ব্যাগ থেকে চাকু বের করে জোবায়েদের গলায় আঘাত করেন।
ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সেই সময় বর্ষা ছিলেন ভবনের তৃতীয় তলায়।

দ্রুত গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তি

হত্যার পরদিনই জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে বংশাল থানায় মামলা করেন।

  • সোমবার রাত ৮টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ভাংনা এলাকা থেকে মাহিরকে,

  • রাত ১০টার দিকে শান্তিনগরের চামেলীবাগ থেকে আয়লানকে,
    এবং একই রাতে বর্ষাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তিনজনই জবানবন্দিতে খুনের কথা স্বীকার করেন। তদন্তে দেখা গেছে, খুনের সময় বর্ষা বাড়িতে ছিলেন এবং মাহিরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন।

ময়নাতদন্ত শেষে দাফন

জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ প্রথম দেখতে পান তার ভাই এনায়েত, যিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের ছাপ দেখতে পান। পরে ময়নাতদন্ত শেষে ২০ অক্টোবর কুমিল্লার কৃষ্ণপুর গ্রামে জোবায়েদকে দাফন করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা ও মানসিক প্রতিশোধই এই হত্যাকাণ্ডের মূল প্রেরণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *