বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 9:52 am
October 29, 2025 9:52 am

দুই দশক পর জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের বৈঠক — পারস্পরিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় একমত বাংলাদেশ-পাকিস্তান

প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নবম জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন (জেইসি) বৈঠক। দীর্ঘ বিরতির পর এই বৈঠককে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকে উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আর পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক

আলোচনায় কৃষি থেকে জ্বালানি পর্যন্ত বিস্তৃত সহযোগিতা

বৈঠকে কৃষি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিমান ও সমুদ্র যোগাযোগসহ নানা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় দেশই একে অপরের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে এবং প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দিয়েছে।

ড. সালেহ উদ্দিন বলেন,

“এই সভা কেবল দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার নয়— এটি জনগণের কল্যাণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি, বাণিজ্য, আইটি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে আমাদের আলোচনা ভবিষ্যতে সরাসরি সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে।”

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন,

“আমরা কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকেও অগ্রসর হতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পারস্পরিকভাবে সহযোগিতা করলে গোটা অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”

পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলও একই মনোভাব প্রকাশ করে। আলী পারভেজ মালিক বলেন,

“বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা সম্ভাবনার তুলনায় খুবই সামান্য। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী একে অপরের অর্থনীতিকে পরিপূরক করতে পারে। আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল ও অন্যান্য শিল্পপণ্যের আমদানি আরও বাড়াতে।”

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব

বৈঠকে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের প্রস্তাব ওঠে। বিশেষ করে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, আইটি, শিক্ষা, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে যৌথ গবেষণা এবং দক্ষতা বিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি বিমান ও সমুদ্র যোগাযোগের সুযোগ বাড়িয়ে বাণিজ্যিক সংযোগ শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নতুন অধ্যায়ের সূচনা

বৈঠকের শেষে উভয় দেশই একে অপরের আতিথেয়তা ও সহযোগিতার প্রশংসা করে। পাকিস্তান প্রতিনিধি দল আশা প্রকাশ করে যে,

“দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য এই ইতিবাচক ধারা ধরে রেখে বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা।”

বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়,

“জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের এই সভা কেবল দু-দেশের সম্পর্ক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকেও এমন পারস্পরিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে যুক্ত করা যেতে পারে।”

সব মিলিয়ে, প্রায় দুই যুগ পর অনুষ্ঠিত এই বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন বৈঠক উভয় দেশের জন্যই একটি ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো খাতে যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দুই দেশের জনগণের উন্নয়নই হবে এই বৈঠকের প্রধান সাফল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *