শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের পরিবার বর্তমানে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী এই পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সক্রিয় অংশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে তাদের এই রাজনৈতিক পরিচয়ই যেন এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের উপর একের পর এক হামলা, নির্যাতন ও প্রতিশোধমূলক তৎপরতা শুরু হয়। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের কিছু উগ্র নেতাকর্মী যারা অতীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন, তারা এখন নানা স্থানে আওয়ামী পরিবারগুলোকে টার্গেট করছেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্থানীয় জামায়াত ও যুবদল-সংশ্লিষ্ট একদল সন্ত্রাসী নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। ভাগ্যক্রমে সে সময় উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে অবস্থান করায় আরিফ প্রাণে রক্ষা পান, কিন্তু তার পরিবারকে রেহাই দেওয়া হয়নি। হামলাকারীরা তার বাবা-মা ও বোনের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়।
আরিফের বোন মোছা. হাসনা হেনা, যিনি পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক এবং সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঢাকা একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর বর্তমানে তিনি বাড়িতে সেরে উঠছেন, তবে এখনও মানসিকভাবে অস্থির রয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

হামলার এক বছর পর, ২০২৫ সালের একই দিনে—৫ আগস্ট—‘সরকার পতনের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আবারও ওই পরিবারটি হামলার শিকার হয়। স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি আরিফের খোঁজ নিতে গিয়ে তার অনুপস্থিতি জানতে পেরে ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
ভুক্তভোগী আরিফের পিতা মোহাম্মদ হায়দার আলি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান, “আমরা এখন ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশকে বিষয়টি জানালেও তারা অভিযোগ নিতে গড়িমসি করছে। কোনো সুরক্ষা পাচ্ছি না।”
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে সাধারণ পরিবারগুলোকে যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, তা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য গভীর হুমকি।











