বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে। প্রায় তিন দশক পর আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, তার মৃত্যুর ঘটনা “হত্যা মামলা” হিসেবে গ্রহণ করতে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফৈরদৌস ইবনে হক এ সংক্রান্ত আদেশ দেন। একইসঙ্গে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর দায়ের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। আদালত রমনা মডেল থানা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে এবং সালমানের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগ ও আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মামলায় সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
দীর্ঘ ২৯ বছরের আইনি লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মারা যান তৎকালীন তরুণ সুপারস্টার সালমান শাহ। সে সময় পুলিশ ঘটনাটিকে “আত্মহত্যা” হিসেবে চিহ্নিত করলেও তার পরিবার প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
পরবর্তীতে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৭ সালে হত্যা মামলা করেন। তবে আদালত মামলাটি “অপমৃত্যু” হিসেবে গ্রহণ করে। পরবর্তী ২৭ বছরে সিআইডি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও পিবিআই— তিনটি সংস্থা পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়, যেখানে সালমান শাহর মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ বলা হয়।
কিন্তু বাদীপক্ষ বারবার অভিযোগ করে এসেছে, প্রভাবশালী একটি মহল হত্যার সত্যকে আড়াল করেছে। অবশেষে আদালত তাদের দাবিকে নতুনভাবে বিচারযোগ্য মনে করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন।
ফরহাদের জবানবন্দিতে হত্যার ইঙ্গিত
আদালতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, মামলার এক আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিলেন, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই স্বীকারোক্তি এত বছর পরেও আনুষ্ঠানিক তদন্তে গুরুত্ব পায়নি।
সোমবার আদালতের নতুন নির্দেশে বলা হয়, ফরহাদের জবানবন্দি ও কমর উদ্দিনের অভিযোগ যুক্ত করে নতুনভাবে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষে রমনা থানা পুলিশকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নায়কের অমর জনপ্রিয়তা
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে সালমান শাহ অভিনয় করেছিলেন ২৭টি সিনেমায়। তার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শাবনূর, যাদের জুটি এখনো বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিংবদন্তি হিসেবে স্মরণীয়।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিক্ষোভ’, ‘বুকের ভেতর আগুন’, ‘সুজন সখী’— প্রতিটি চলচ্চিত্রে তিনি নিজেকে পরিণত করেছিলেন তরুণ প্রজন্মের ভালোবাসার প্রতীকে।
তার মৃত্যু আজও অগণিত ভক্তের কাছে একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন।
পারিবারিক সংগ্রাম
কমর উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মামলার দায়ভার নেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। তিনি বলেছেন,
“আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না। এখন নতুনভাবে আলোর দেখা পাচ্ছি।”
আদালতের এই আদেশে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত।










