প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর, যেখানে ইতিহাস আর শিল্প একসঙ্গে নিঃশব্দে কথা বলে। সেই জাদুঘরেই রবিবার সকালে ঘটে গেল এক সিনেমার মতো সাহসী চুরি—মাত্র সাত মিনিটে অমূল্য আট রাজকীয় রত্ন গায়েব!
রবিবার সকালটা ছিল অন্য দিনের মতোই। নিয়মমাফিক দর্শনার্থীদের জন্য দরজা খোলার আধ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ পাশের বারান্দায় দেখা যায় এক ট্রাক ও বৈদ্যুতিক মই। এমন দৃশ্য প্যারিসের রাস্তায় অচেনা নয়, তাই কেউ খেয়ালও করেনি। কিন্তু সেই ট্রাক ও মই-ই ছিল চোরদের অস্ত্র।
দুই চোর বৈদ্যুতিক মই বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে গ্রাইন্ডার দিয়ে ভাঙে একটি জানালা। সঙ্গে সঙ্গে বাজে নিরাপত্তা অ্যালার্ম, কিন্তু ততক্ষণে তারা ঢুকে পড়ে অ্যাপোলো গ্যালারিতে, যেখানে রাজমুকুট, হীরাখচিত অলংকার ও ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছিল।
চোরেরা মুহূর্তেই দুটি কাচের তাক ভেঙে ফেলে। দ্বিতীয় অ্যালার্ম বেজে উঠলেও তাদের থামানো যায়নি। তারা তুলে নেয় রাজকীয় নীলা ও পান্নার নেকলেস, তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী ইউজেনির টিয়ারা, এবং উনিশ শতকের আরও কয়েকটি রত্ন। সব মিলিয়ে আটটি অমূল্য বস্তু।
জাদুঘরের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে থাকা সেইন নদীর ধারে অপেক্ষায় ছিল আরও দু’জন সহযোগী—স্কুটার নিয়ে। সাত মিনিটের মাথায় চোরেরা নিচে নেমে স্কুটারে চড়ে পালিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ গ্যালারিতে পৌঁছায় ঠিক তখনই, যখন রত্নগুলো উধাও।
ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬০ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের ধারণা, এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। ঘটনাটিকে “ডাকাতি” নয়, বরং নিখুঁত চুরি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
প্যারিসের মেয়র আরিয়েল ওয়েইল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এটা কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়। দিনের আলোয় রাজমুকুটের রত্ন চুরি হয়েছে—এ শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এটি ফ্রান্সের ঐতিহ্য হারানোর ঘটনা।”
যা যা চুরি গেছে
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চোরেরা নিয়ে গেছে—
-
সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা: ২১২টি মুক্তা, ১,৯৯৮টি হীরক ও ৯৯২টি রোজ-কাট হীরা।
-
ইউজেনির কোমরবন্ধনী: ২,৪৩৮টি হীরা ও ১৯৬টি রোজ-কাট হীরা।
-
১৮৫৫ সালের ‘রেলিকুয়ারি ব্রোচ’।
-
রানি হরটেন্স ও রানি মেরি অ্যামেলির কানের দুল।
-
নেপোলিয়নের উপহার হিসেবে দেওয়া পান্না ও হীরার সেটের একজোড়া দুল।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পান্না ও হীরার এই সেটটি ২০০৪ সালে সংরক্ষণে আনা হয়। নেপোলিয়ন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেরি লুইসকে বিয়ের সময় দুটি বিলাসবহুল গয়নার সেট উপহার দেন—তারই একটি এখন ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসী চুরির শিকার।
ফরাসি রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক এই অলংকারগুলো ফিরে পাওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
Tags:










