টেলিগ্রামভিত্তিক পর্নোগ্রাফি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী-বিদ্বেষী ও অশ্লীল ভিডিও বাণিজ্যের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রুপ, অ্যাডমিন এবং অর্থ লেনদেনকারী প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে ভয়াবহ এই অনলাইন অপরাধের চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে তা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তদন্ত নির্দেশ ও প্রতিবেদন দাখিল
আদালত ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনারকে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে, তদন্তে উদঘাটিত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত মামলা দায়ের এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে সহযোগিতার জন্য প্রতিবেদনের দুই সাংবাদিককেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এবং আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভয়াবহ অনলাইন প্রতারণার চিত্র
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘এক্সপোজ ভাইরাল ভিডিও’, ‘দেশি ভাইরাল ভিডিও’, ‘এক্সপোজ অরিজিনাল’ ও ‘ব্রেইনটস অফিসিয়াল ডেমো’—এই ধরনের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোয় হাজার হাজার সদস্য যুক্ত।
এসব চ্যানেলে বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের আপত্তিকর ভিডিও বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রথমে ফেসবুকে এসব ভিডিওর “ডেমো ক্লিপ” ছড়িয়ে দেওয়া হয়, পরে সম্পূর্ণ ভিডিওর লিংক পেতে অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
টাকা দেওয়ার পর ব্যবহারকারীদের টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে পুরো ভিডিও পাঠানো হয়।
সাইবার অপরাধের জালে তরুণ সমাজ
তদন্তে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে এই ভিডিওগুলো তৈরি হয়েছে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যক্তিগত ভিডিও সংগ্রহ করে, আবার কিছু ক্ষেত্রে হ্যাকিং ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে।
এই নোংরা বাণিজ্যের ফলে অসংখ্য তরুণীর মানসিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে।
আদালত জানিয়েছে, এ ধরনের অপরাধ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন নয়, বরং এটি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকেও গভীরভাবে আঘাত করছে।











