বিশ্ববাজারে টানা উর্ধ্বগতির পর স্বর্ণের দামে হঠাৎ বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছানোর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেলে স্বর্ণের দাম একদিনে ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৫৬ ডলার ১৯ সেন্টে। আগের দিন সোমবার স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ২১ সেন্টে পৌঁছেছিল।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত মূল্যবৃদ্ধির পর এখন স্বর্ণের বাজারে চলছে একটি স্বাভাবিক সংশোধন ধাপ (Correction Phase)। তারা বলছেন, “দাম যে হারে বাড়ছিল, সেটি টেকসই ছিল না; তাই বিনিয়োগকারীরা এখন মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। তবে স্বর্ণের মৌলিক চাহিদা এখনো খুব শক্তিশালী।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত এক বছরে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক স্বর্ণ ক্রয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা মিলিয়ে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাও সোনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কারণ সুদ কমলে স্বর্ণের মতো সুদবিহীন নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়ে যায়।
বর্তমানে বাজারের নজর যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI)-এর দিকে, যা আগামী শুক্রবার প্রকাশিত হবে। অনুমান করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ১ শতাংশে। যদি এই তথ্য ইতিবাচক হয়, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সপ্তাহেই সুদের হার ০.২৫ শতাংশ কমাতে পারে, যা পুনরায় স্বর্ণবাজারে চাঙাভাব আনতে পারে।
স্বর্ণের এই পতনের সময়েই এশিয়ার শেয়ারবাজারে দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নতি এবং জাপানে সানায়ে তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার খবর বাজারে নতুন আশাবাদ তৈরি করেছে।
বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউানোভো বলেন, “অনেক বিনিয়োগকারী স্বর্ণের আগের উত্থানে অংশ নিতে পারেননি। এখন তারা এই সাময়িক পতনকে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যা বড় ধরণের মূল্যপতনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে।”
স্বর্ণের পাশাপাশি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামেও বড় পতন দেখা গেছে।
- রুপার দাম কমেছে প্রায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, এখন প্রতি আউন্স ৫০ ডলার ৩১ সেন্ট।
- প্লাটিনাম নেমে এসেছে ১ হাজার ৫৮৩ ডলার ৩৮ সেন্টে,
- আর প্যালাডিয়াম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩০ ডলার ০৪ সেন্টে।
বাজার পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে লন্ডনের স্পট মার্কেটে রুপার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ধাতুর মূল্যে নিম্নমুখী প্রভাব ফেলছে।










