বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 11:30 pm
October 29, 2025 11:30 pm

সন্তান খাবার খেতে না চাইলে কী করবেন?

শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি বাবা–মায়েরা করেন, তার একটি হলো: “সন্তান খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানালে কী করা উচিত?” বিশেষ করে টডলার বা ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। অনেক সময় তারা তাদের প্রিয় খাবার ছাড়া অন্য কোনো খাবারই খেতে চায় না, আবার অনেকে সামনে দেওয়া খাবার ফিরিয়ে দিয়ে অন্য কিছু দাবি করে। এটি বাবা–মায়ের জন্য যেমন হতাশাজনক, তেমনি সন্তানের ক্ষুধামান্দ্য থাকলে তা উদ্বেগজনকও হতে পারে।

কেন শিশুরা খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানায়?

শিশুর খাবারে অনীহার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন—

  • অসুস্থতা বা শারীরিক অস্বস্তি
  • দাঁত ওঠা বা শারীরিক বিকাশের ধাপ (developmental milestones)
  • হঠাৎ বৃদ্ধি (growth spurts)
  • আগের বেলার খাবার এখনও হজম না হওয়া
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি, মনোযোগ বিঘ্ন বা রুটিন পরিবর্তন
  • আবহাওয়া বা মানসিক অবস্থা

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শিশুর প্রতিদিন তিন বেলা খাবার ও ২টি স্ন্যাকসের সুযোগ থাকা যথেষ্ট। কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রতিটি খাবারের সময় তারা সমান ভোজন appetitie দেখাবে।

বিকল্প খাবার সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া উচিত কি?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান যখন সামনে দেওয়া খাবার খেতে চায় না, তখনই বিকল্প খাবার অফার করা সমীচীন নয়। আমেরিকান ডায়েটিশিয়ান এলিন স্যাটার-এর ‘Division of Responsibility’ তত্ত্ব অনুযায়ী:

  • অভিভাবকের দায়িত্ব: কবে ও কী খাবার দেবেন তা ঠিক করা
  • সন্তানের দায়িত্ব: তারা খাবে কি না এবং কতটুকু খাবে, তা নির্ধারণ করা

অর্থাৎ, মা–বাবার কাজ হলো খাবার পরিবেশন করা, আর খাওয়ার সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর ছেড়ে দেওয়া। সন্তান যদি সবসময় খাবার ফিরিয়ে দিয়ে বিকল্প হিসেবে কেবল প্রিয় খাবার পায়, তবে তারা শিখে ফেলবে যে অচেনা খাবার প্রত্যাখ্যান করলেই তাদের পছন্দসই খাবার মিলবে—ফলে খাবারের বৈচিত্র্য থেকে বঞ্চিত হবে।

সন্তান যদি খাবার ফিরিয়ে দিয়ে স্ন্যাকস চায়?

অনেক সময়ে শিশুরা খাবার খেতে না চেয়ে স্ন্যাকস দাবি করে। এর পেছনে কারণ হতে পারে—

  • সীমা পরীক্ষা (boundary pushing)
  • নির্দিষ্ট স্ন্যাক–মিল রুটিন না থাকা
  • স্ন্যাক খাবার মূল খাবারের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয় হওয়া

সমাধান হতে পারে:

  • প্রতিদিন একই রুটিনে মিল ও স্ন্যাক পরিবেশন করা
  • স্ন্যাক হিসেবে শুধু টোস্ট বা বেবি ক্রিস্পের মতো পছন্দসই খাবার না দিয়ে স্বাস্থ্যকর, ব্যালান্সড স্ন্যাক দেওয়া
  • বড় হলে শিশুদের খাবার প্রস্তুতি ও মেনু নির্বাচনে যুক্ত করা
  • কম পরিচিত খাবারগুলো এমন সময়ে দেওয়া, যখন তাদের ক্ষুধা বেশি থাকে

যদি কেবল দুধ খেতে চায়?

অনেক শিশু ১ বছর পার হওয়ার পরও প্রধান পুষ্টি হিসেবে দুধকে আঁকড়ে ধরে—যা বাবা–মায়ের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। যদিও দুধ এখনও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে খাদ্য থেকে বেশি পুষ্টি পাওয়া প্রয়োজন।

সম্ভাব্য কারণ:

  • দুধ সহজলভ্য ও পরিচিত স্বাদের
  • বোতল থেকে দুধ খাওয়ায় তারা স্বস্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করে
  • অসুস্থতা, দাঁত ওঠা, বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন
  • মায়ের সংস্পর্শ বা সংযোগের বিকল্প হিসেবে দুধ চাইতে পারে

সমাধান:

  • দিনে কখন দুধ দেওয়া হবে, তার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা
  • বোতল থেকে দুধ খাওয়ানো বাদ দিয়ে ধীরে ধীরে স্ট্র-কাপ বা ওপেন কাপ ব্যবহার করা
  • সংযোগের জন্য বিকল্প অভ্যাস তৈরি করা—যেমন গল্প শোনা, খেলায় সময় কাটানো বা আদর–আলিঙ্গন দেওয়া
  • কম বয়সী শিশুর জন্য ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ কমিয়ে খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো

রাতে ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুম ভাঙবে না তো?

অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন থাকেন, বিশেষ করে শিশু রাতের খাবার বাদ দিলে সে মাঝরাতে ক্ষুধায় জেগে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের রাত জাগার অনেক কারণ থাকতে পারে—আর সবসময় তা ক্ষুধার কারণে নয়।

সমাধান:
ঘুমানোর আগে একটি ছোট, ব্যালান্সড স্ন্যাক রুটিনে রাখা যেতে পারে। তবে এটিকে কখনোই “ডিনারের বিকল্প” হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে শিশু বুঝতে পারে যে, ডিনার না খেলেও পরে স্ন্যাক মেলে যাবে। বরং সেটিকে রুটিনের অংশ করুন—যাতে এটি সবসময় নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হয়, ডিনার যাই হোক না কেন।

কখন বিকল্প খাবার দেওয়া যেতে পারে?

কিছু পরিস্থিতিতে বিকল্প খাবার দেওয়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে, যেমন—

  • শিশু অসুস্থ এবং মূল খাবার খাওয়া কষ্টকর হলে
  • শিশু খাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা বা মেডিক্যাল সুপারিশে রয়েছে
  • খাবারটি হঠাৎ অত্যধিক ঝাল বা অরুচিকর হয়ে গেলে
  • দিনে মায়ের ক্লান্তির কারণে খাবারের লড়াই না করে সহজ কোনো সমাধান নেওয়া প্রয়োজন হলে

খাবার প্রত্যাখ্যান শিশুদের স্বাভাবিক আচরণের অংশ। মূল বিষয় হলো ধৈর্য ধরা এবং খাবারকে শাস্তি বা চাপের বদলে আনন্দ ও পরিচিতির জায়গা করে দেওয়া।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, বৈচিত্র্যময় খাবার নিয়মিত পরিবেশন, সঠিক রুটিন বজায় রাখা এবং সন্তানের ক্ষুধা ও আগ্রহকে সম্মান করা—এই তিনটি বিষয়ই খাবার নিয়ে সংঘাত কমাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশু আলাদা। তাই কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা বা ওজন–বৃদ্ধি–সংক্রান্ত উদ্বেগ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *