আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির দাবি, বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের মার্জার ঘোষণা ও সেসব ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণা করে গভর্নর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক জরুরি সভা শেষে সংগঠনের নেতারা বলেন, “শেয়ার শূন্য করার কোনো আইনগত ক্ষমতা গভর্নরের নেই। শুধু গভর্নর নন, অর্থ উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে।”
এর আগে বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি বৃহৎ ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।
যেসব ব্যাংকের বোর্ড বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন প্রশাসকরা ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনা, আইটি নিরাপত্তা, মানবসম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং শাখাগুলোর দায়িত্ব বণ্টন করবেন। ব্যাংকগুলোর এলসি, আমানত ও চেক নিষ্পত্তির কাজ আগের মতোই চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরী, মো. কবির হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, “গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে, তাই আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে যাদের প্রয়োজন আছে, তারাই কেবল টাকা তুলবেন— অযথা ব্যাংকে ভিড় না করার অনুরোধ করছি।”
তিনি আরও জানান, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের বিষয়ে শিগগিরই আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হবে।
গভর্নর বলেন, “নতুন ইসলামী ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা— যা দেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় বেশি। শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ, তাই শেয়ারমূল্য শূন্য বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।”
তিনি আশ্বস্ত করেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা ১০০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, “এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার পরিবর্তন হলেও এই প্রক্রিয়া বজায় থাকবে।”
