আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে ভেতরেই মতবিরোধে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলের নির্বাহী কাউন্সিলের সাম্প্রতিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে — এই দুই রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় গেলে লাভ–ক্ষতি কী হতে পারে, তা নিয়ে।
গত শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের মধ্যে কেউ কেউ জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে, আবার কেউ বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তবে সভার বেশির ভাগ সদস্যই বলছেন — বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে ‘তৃতীয় বিকল্প’ জোটে যাওয়াই এনসিপির জন্য কৌশলগতভাবে নিরাপদ ও কার্যকর হবে।
জোটের হিসাব–নিকাশ
সভায় আলোচনায় উঠে এসেছে, বিএনপি আসন ভাগাভাগি করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ালে এনসিপির জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলালে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের ছাপ এনসিপির ইমেজে লেগে যেতে পারে — যা দলের “মধ্যপন্থী” অবস্থানকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তাই অনেকে মনে করেন, তৃতীয় জোট গঠনই এনসিপির রাজনৈতিক টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত পথ।
সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিকল্পনা
এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন জানান, সভায় নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,
“যারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর খুব শিগগিরই এনসিপি নিজস্ব প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে।”
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বরের জাতীয় সমন্বয় সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, অক্টোবরের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা–উপজেলা ও ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে।
তৃতীয় জোটের সম্ভাবনা
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনা চলছে — এনসিপি কি গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের সঙ্গে জোটে যাবে, নাকি ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে নতুন সমঝোতা গড়ে তুলবে?
সম্প্রতি জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়।
সেখানে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের কৌশল ও নির্বাচনী জোটের কাঠামো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
এদিকে এনসিপি সম্প্রতি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে, যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও জুলাই গণহত্যা ইস্যুতে যৌথ অবস্থানের কথা উঠে আসে।
এখনো চূড়ান্ত নয় কোনো সিদ্ধান্ত
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জানিয়েছেন,
“কারও সঙ্গে জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আরও ধাপ বাকি আছে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে এনসিপি যদি স্বাধীনভাবে প্রার্থী দেয়, তবে সেটি হতে পারে “তৃতীয় শক্তির পুনরুত্থানের সূচনা”—অথবা বড় দুই জোটের মধ্যে সমীকরণের নতুন মোড়।











