বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেওয়া রিমি, বয়স মাত্র ১২ বছর। তার বাবা-মা দিনমজুর, সংসার চালাতে হিমশিম খায়। রিমির স্বপ্ন ছিল স্কুলে পড়াশোনা করে বড় হবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একদিন তার মা তাকে বললেন, “স্কুলে যাওয়ার চেয়ে কাজে যাওয়াই ভালো, তাতে কিছু টাকা আসবে।” রিমি বাধ্য হয়ে ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করল।
ফ্যাক্টরির মালিক জানতেন, শিশুশ্রম অবৈধ। তবুও, তিনি রিমিকে কাজে নিয়োগ দিলেন, কারণ শ্রমিকের অভাব ছিল। রিমি প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করত, অথচ তার বয়স অনুযায়ী কাজের সময় ৮ ঘণ্টার বেশি হতে পারত না। তার কাজের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর, নিরাপত্তাহীন এবং অত্যন্ত কষ্টকর।
একদিন, একটি এনজিও কর্মী ফ্যাক্টরিতে গিয়ে রিমির অবস্থা দেখে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেন। প্রশাসন এসে ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দিল। রিমি এবং তার মতো আরও কয়েকজন শিশুকে উদ্ধার করে স্কুলে ভর্তি করা হলো। রিমির জীবনে পরিবর্তন এল, কিন্তু কতটা স্থায়ী হবে তা সময়ই বলবে।
এই ঘটনা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? রিমির মতো হাজারো শিশু প্রতিদিন শ্রমের শিকার হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা—সব কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ সমাজ, পরিবার, সরকার—কেউই তাদের পাশে দাঁড়ায় না। আমরা কি তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারি না?
অনেকেই বলবেন, “এটা তো আমাদের সমাজের বাস্তবতা, কিছু করার নেই।” কিন্তু যদি আমরা সবাই এই মনোভাব পোষণ করি, তাহলে কখনোই পরিবর্তন আসবে না। রিমির মতো শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের অধিকার রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
রিমির গল্পটি কেবল একটি উদাহরণ। প্রতিদিন এমন হাজারো ঘটনা ঘটে, যা আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু আমরা চুপ থাকি, কারণ এটি আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। কিন্তু মানবাধিকার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি সবার। যদি আমরা মানবাধিকার রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
রিমির মতো শিশুরা যদি তাদের অধিকার না পায়, তাহলে আমরা কীভাবে বলতে পারি যে আমাদের সমাজ উন্নত? আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে আমরা মানবাধিকার রক্ষা করতে পারব না।
রিমির গল্পটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মানবাধিকার রক্ষার জন্য আমাদের সবার সচেতনতা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু প্রশাসন বা এনজিও নয়, প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব মানবাধিকার রক্ষা করা।
উপসংহার: রিমির মতো শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের অধিকার রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। যদি আমরা মানবাধিকার রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের সবার সচেতনতা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন।











