রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে ভয়াবহ আগুনে ঝরে গেছে ১৬টি প্রাণ। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেক পরই যখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনে ঢোকেন, ততক্ষণে চারপাশ ছেয়ে গেছে ধোঁয়ায়, গলে গেছে দেয়ালের রঙ, ভেতরে মিশে আছে মানুষের পোড়া গন্ধ।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রথমে নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আরও সাতজনের মরদেহ পাওয়া যায়। সবগুলো মরদেহ এখন পুলিশের হেফাজতে আছে। অভিযান এখনও চলছে।’
চারতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন), জানান, “যাদের আমরা পেয়েছি, তাদের মুখমণ্ডল চেনার উপায় নেই। তীব্র তাপে শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, এখন শুধুই ডিএনএ পরীক্ষাই পরিচয়ের একমাত্র উপায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ধারণা, ভবনের ভেতরে রাসায়নিক বিস্ফোরণের পর বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসে অচেতন হয়ে অনেকেই আর বের হতে পারেননি। আগুন মুহূর্তেই সবকিছু গ্রাস করে নেয়।”
ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিট সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। বিকেল নাগাদ গার্মেন্টস অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন তখনো জ্বলছিল।
রাসায়নিক মজুদের কারণে উদ্ধার অভিযান এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান কর্মকর্তারা। তাজুল ইসলাম বলেন, “গুদামের ভেতরে প্রবেশ করা এখনো বিপজ্জনক। তাই আমরা ড্রোন ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্র ব্যবহার করছি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, পোড়া ছাদের ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া এখনো উঠছে। ভবনের নিচে কাঁদছেন নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা। এক মা নিজের সন্তানের ছবিটি বুকের কাছে চেপে ধরে বলছেন, “একবার শুধু জানাইয়া দিক, আমার ছেলেটা বাঁচছে কিনা।”
আগুনের তাপ, রাসায়নিকের গন্ধ আর মানুষের আহাজারি—সব মিলিয়ে সন্ধ্যা নামলেও রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এখনো এক মৃত্যুর নগরী।









