বিশ্বকাপের ঠিক আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলে তেমন কোনো নাটকীয়তা থাকার কথা ছিল না। কিন্তু স্কোয়াড ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়াতেই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়—অধিনায়ক লিটন দাস রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিলেন নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্তে। বিশেষ করে শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে দলে না রাখার বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল অস্বাভাবিকভাবে স্পষ্ট, সরাসরি এবং অসন্তোষে ভরা।
ঘোষিত স্কোয়াডে বাঁহাতি ব্যাটার শামীমের অনুপস্থিতি অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, যাকে সাম্প্রতিক টি–টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের বিচারে তেমন এগিয়ে মনে করছেন না অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই লিটন দাস বলেন, শামীমকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে তাকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি, “থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়—পুরোটাই নির্বাচকদের। কেন বাদ পড়লো, আমাকেই জানানো হয়নি। অথচ অধিনায়ক হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত জানার কথা।”
লিটনের ভাষায়, জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া প্রতিটি ক্রিকেটারই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই উঠে এসেছেন। তবে শামীমকে বাদ দেওয়ার কোনো ক্রিকেটীয় কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। বিপরীতে অঙ্কনের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা এবং মিডল অর্ডারে একজন কার্যকর বাঁহাতি ব্যাটারের অনুপস্থিতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডান–বাঁহাতির সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে লিটন বলেন, “এটা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আপনার মাথায় এসেছে বিষয়টি, আমাদের তো আরও ভাবা উচিত।”
সংবাদ সম্মেলনে লিটন খোলামেলা স্বীকার করেন, দল গঠন নিয়ে তার বা প্রধান কোচের সঙ্গে কোনো আলোচনার সুযোগই থাকে না। বরং তাকে জানানো হয়েছে, যেই স্কোয়াড দেওয়া হবে, সেটি নিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হবে—কোনো পরামর্শ বা মতামতের সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিকে তিনি ‘অসম্মানজনক না হলেও অনুচিত’ বলে মনে করেন। বিশ্বকাপের দল নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে জানান, যদি একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তবে তাকে সেই দলে নিয়েই মাঠে নামার পরিকল্পনা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনজুড়ে লিটনের বক্তব্য ছিল একেবারে নিঃসংকোচ। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন—বর্তমান স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের সামর্থ্য বা যোগ্যতা নিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। বরং তার অভিযোগ মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতার অভাব এবং অধিনায়কত্বের মৌলিক কাঠামোকে উপেক্ষা করা নিয়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে দল নির্বাচনের বিষয়টি বহুদিন ধরেই বিতর্কের জায়গা। তবে একজন অধিনায়কের মুখে এমন সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ বিরল—বিশ্বকাপের ঠিক আগে যা আরও বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
