বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 8:19 pm
October 29, 2025 8:19 pm

মানি লন্ডারিং বিরোধী এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপে ‘পর্যবেক্ষক’ মর্যাদা পেল বিমসটেক

বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন—সংক্ষেপে বিমসটেক (BIMSTEC)—এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (APG)-এ “অবজারভার” বা পর্যবেক্ষক মর্যাদা লাভ করেছে।

রবিবার এক বিবৃতিতে বিমসটেক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, এ উন্নয়ন সংগঠনটির জন্য একটি বড় মাইলফলক, যা আঞ্চলিক পর্যায়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সহযোগিতা জোরদার করবে।

নতুন অগ্রগতি: যুক্ত হলো আন্তর্জাতিক জোটে

পর্যবেক্ষক মর্যাদার ফলে বিমসটেক এখন থেকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারবে। এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক সেরা চর্চা থেকে উপকৃত হবে এবং নতুন ধরনের আর্থিক অপরাধ মোকাবিলায় যৌথভাবে অবদান রাখতে পারবে।

বিমসটেক সেক্রেটারিয়েট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—

“এ মর্যাদা লাভ বিমসটেকের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে আরও সুদৃঢ় করবে।”

এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ (APG) সম্পর্কে

১৯৯৭ সালে ব্যাংককে প্রতিষ্ঠিত Asia-Pacific Group on Money Laundering (APG) হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় FATF-ধাঁচের আঞ্চলিক সংস্থা (FSRB)। এর সদর দপ্তর সিডনি, অস্ট্রেলিয়ায়।

সংস্থাটি মূলত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন দমন (AML/CFT) মানদণ্ড বাস্তবায়নে কাজ করে। পাশাপাশি IMF, বিশ্বব্যাংক, OECD, UNODC, ইন্টারপোল ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।

বিমসটেককে পর্যবেক্ষক মর্যাদা প্রদান করার এ সিদ্ধান্তকে ধরা হচ্ছে সংস্থাটির বহুবছরের প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে।

সন্ত্রাস দমন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিমসটেকের ভূমিকা

২০০৫ সালে বিমসটেক Joint Working Group on Counter Terrorism and Transnational Crime (JWG-CTTC) গঠন করে। এর অধীনে একটি আলাদা উপদল গঠিত হয় Anti-Money Laundering and Combating the Financing of Terrorism (AML/CFT) বিষয়ে।

এরপর থেকে সংস্থাটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে—

  • তথ্য বিনিময়,
  • সক্ষমতা বৃদ্ধি (capacity building),
  • যৌথ কৌশল প্রণয়ন

—এসব বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি সাধন করেছে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

বিমসটেক সেক্রেটারিয়েট এপিজি ও এর সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে ভারতকে, কারণ দেশটি সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা খাতে বিমসটেকের আঞ্চলিক সহযোগিতায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

বিমসটেকের বর্তমান চিত্র

বিমসটেক বর্তমানে সাতটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করছে—
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড।

সংগঠনটি ৭টি প্রধান খাতে কাজ করছে:

  1. কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা
  2. যোগাযোগ ও সংযোগ (Connectivity)
  3. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন
  4. জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ (People-to-People Contact)
  5. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন
  6. নিরাপত্তা
  7. বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন

এ ছাড়া সহযোগিতা বিস্তৃত হয়েছে আরও ৮টি উপখাতে:
নীল অর্থনীতি (Blue Economy), পার্বত্য অর্থনীতি, জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, দারিদ্র্য বিমোচন, জনস্বাস্থ্য এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন।

বিমসটেকের জন্য এ ‘পর্যবেক্ষক’ মর্যাদা শুধু একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিই নয়, বরং ভবিষ্যতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে বড় ধরনের কৌশলগত সুযোগ তৈরি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ ও আর্থিক স্বচ্ছতার প্রচেষ্টাকে আরও পরিপূর্ণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *