গত আগস্ট মাসে সারা দেশে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৪২৮ জন নিহত এবং ৭৯১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন ৫৭ জন শিক্ষার্থী। একই সময়ে নৌপথে ও রেলপথে দুর্ঘটনায় আরও কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন (RSF) সোমবার প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত মাসে দেশে মোট ৪৫১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান
- মোট দুর্ঘটনা: ৪৫১টি
- নিহত: ৪২৮ জন
- আহত: ৭৯১ জন
- নিহত শিক্ষার্থী: ৫৭ জন
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে—
- মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ১৩২ জনের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩০.৮৪%।
- নিহত পদচারী: ৮৩ জন
- নিহত চালক ও সহকারী: ৫২ জন
নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনা
শুধু সড়ক দুর্ঘটনাই নয়, আগস্ট মাসে নৌপথ এবং রেলপথেও একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে।
- নৌপথে: ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ১৭ জন আহত।
- রেলপথে: ৩৭টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত, ১১ জন আহত।
ভৌগোলিক বিভাগভিত্তিক চিত্র
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট দুর্ঘটনার মধ্যে—
- জাতীয় মহাসড়কে: ২১৪টি দুর্ঘটনা
- আঞ্চলিক সড়কে: ১৩৫টি দুর্ঘটনা
- গ্রামীণ সড়কে: ৪২টি দুর্ঘটনা
- নগর এলাকায়: ৬০টি দুর্ঘটনা
বিভাগভিত্তিক দুর্ঘটনা হার:
- ঢাকা বিভাগ: ২৬.৩৮%
- চট্টগ্রাম বিভাগ: ২১.২৮%
- রাজশাহী বিভাগ: ১২.৬৩%
- খুলনা বিভাগ: ৯.৯৭%
- সিলেট বিভাগ: ৯.০৯%
- রংপুর বিভাগ: ৯.৫৩%
- ময়মনসিংহ বিভাগ: ৭.০৯%
- বরিশাল বিভাগ: ৪%
ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে—১১৯টি দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে নিহত হয়েছেন ১৬ জন।
দুর্ঘটনার পেছনের কারণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন (RSF) দুর্ঘটনার পেছনে একাধিক কাঠামোগত ও মানবিক কারণ উল্লেখ করেছে—
- যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত যানবাহন
- বেপরোয়া ও অসচেতন ড্রাইভিং
- চালকদের অবস্থা: অদক্ষতা, অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও বেতনের অনিশ্চয়তা
- মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের চলাচল
- তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা
- ট্রাফিক আইন অমান্য ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যকারিতার ঘাটতি
- পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
রিপোর্টে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক নিরাপত্তা এখন একটি জাতীয় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি নীতিনির্ধারক মহলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে—
- পরিবহন খাতে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ,
- আইন প্রয়োগে কঠোরতা,
- দায়িত্বজ্ঞানহীন ড্রাইভারদের শাস্তি,
- সড়ক ও মহাসড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন,
- যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।
আগস্ট মাসে সড়ক, নৌপথ ও রেল দুর্ঘটনায় সম্মিলিতভাবে শত শত মানুষের প্রাণহানি আবারও প্রমাণ করেছে যে এ খাতে সংস্কার ও দায়বদ্ধতা আর দেরি করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনা শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে চিরতরে বিপর্যস্ত করছে। তাই সড়ক নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপই পারে এই মৃত্যুমিছিল থামাতে।











