ভারতের আসামের মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি সিলচর (NIT-Silchar) থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ—মাদক সেবন ও সহপাঠীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের একাডেমিক মহলেই নয়, উভয় দেশের শিক্ষার্থী সমাজে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কী অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে?
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) রাতে হোস্টেলে এক অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষ ঘটে।
- অভিযোগ রয়েছে, ওই শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনের পর সহিংস আচরণ করেছিল।
- এতে একই প্রতিষ্ঠানভুক্ত কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আক্রান্ত হন।
- ঘটনায় আরও কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থীও আতঙ্কিত হন বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
কারা এই শিক্ষার্থী?
বহিষ্কৃত পাঁচজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে আইসিসিআর (Indian Council for Cultural Relations) বৃত্তি নিয়ে সেখানে পড়াশোনা করছিলেন।
- ICCR বৃত্তি প্রতিবছর দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভারতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়।
- বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থী এ বৃত্তিতে ভারত যায়, যাদের একটি বড় অংশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষায় যুক্ত হয়।
পূর্বাপর প্রেক্ষাপট
NIT-Silchar দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
তবে এর আগে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ বা বহিষ্কারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি। এ কারণেই ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আতঙ্ক–উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
- স্থানীয় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বাহ্যিক চাপ এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতা বাড়ছে, তাই কড়াভাবে নজরদারি প্রয়োজন।
- অন্যদিকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছে, অভিযোগের দ্রুত বিচার হয়েছে; পর্যাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেছেন—
“এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে আমরা চাইবো এর ফলে ভবিষ্যতে অন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন।”
এনআইটি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“মাদক এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রশাসন শূন্য–সহনশীলতা নীতি (Zero Tolerance Policy) অনুসরণ করবে। এজন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কূটনৈতিক ও শিক্ষা মহলের প্রতিক্রিয়া
ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে, এ ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রের সাথে কথা বলে ভারতস্থ বাংলাদেশ মিশন বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, বিদেশে পাঠরত শিক্ষার্থীদের আচরণ দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাই চলার পথে শৃঙ্খলা–সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
কেন এই ঘটনা আলোচনায়?
১. শিক্ষার্থী বহিষ্কারের অভিযোগ সরাসরি মাদক এবং সহিংসতার সঙ্গে জড়িত।
২. শিক্ষার্থীরা ICCR বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের চোখে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।
৩. এনআইটি সিলচর ভারত সরকারের আওতাধীন একটি জাতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, যেখানে পড়াশোনার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত।
আসামের এই ঘটনা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই একটি সতর্কবার্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি শৃঙ্খলাপরায়ণ থাকা এবং আইনকানুন মেনে চলাই বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর প্রধান দায়িত্ব।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বহিষ্কৃত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে আপাতত এক বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। সময় শেষে তারা চাইলে ফেরার সুযোগ পেতে পারেন।
তবে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে: এর প্রভাব ভবিষ্যতে বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা নতুন বাধার সৃষ্টি করবে?











