বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)-এর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ এনেছেন বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক এবং ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু।
তাদের দাবি, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং বিভাগীয় পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটির কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এনএসসির পরিচালকরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন।
হস্তক্ষেপের অভিযোগ
আমিনুল হক অভিযোগ করে বলেন,
“ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নির্দেশে এনএসসির পরিচালকরা সরাসরি জেলা প্রশাসকদের ফোনে নির্দেশ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন দিতে হবে, বাইরের কাউকে অনুমোদন দেবেন না। অথচ বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক চাইলে অ্যাডহক কমিটি বা বাইরে থেকেও কাউন্সিলর মনোনয়ন দিতে পারেন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে ১৪টি ক্লাবের নিবন্ধন বাতিলের চেষ্টা করেছিলেন, যা এখনো ষড়যন্ত্রের মতো চলমান।
এ ব্যাপারে এনএসসির নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি এবং হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাতেও সাড়া দেননি।
ঢাকা বিভাগের কাউন্সিলর মনোনয়ন
দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা বর্তমানে অ্যাডহক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই কাঠামো ব্যবহার করেই সম্প্রতি ঢাকা বিভাগ থেকে কাউন্সিলর মনোনীত করা হয়েছে সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক ও বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে।
গতকাল অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে বুলবুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এছাড়া ঢাকা জেলা থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়েছেন ক্রিকেট সংগঠক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
বিএনপি ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক এই মনোনয়নকেও সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ক্লাব মালিকানা নিয়ে জটিলতা
এদিকে ঢাকার চারটি ক্লাবের মালিকানা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে শুনানির ঘটনায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
- সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলো হলো: রেঞ্জার্স ক্রিকেট একাডেমি, ব্লুজ ক্রিকেটার্স, গোল্ডেন ঈগলস ও ঢাকা স্পার্টান্স।
- সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার-এর ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলায় ক্লাবগুলো নিজের মালিকানা দাবি করেন তানভির আহমেদ। তবে শুনানিতে তিনি উপস্থিত না হওয়ায় রায় হয়নি।
- উল্টোদিকে আমজাদ হোসেন দাবি করেন, তিনি ইতিমধ্যে তানভিরের কাছ থেকে এই ক্লাবগুলো কিনে নিয়েছেন।
- এদিকে ক্লাবগুলোর প্রকৃত মালিক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া এখনও আশাবাদী যে তিনি নিজ ক্লাবগুলো পুনরায় ফিরে পাবেন।
সংগঠকদের অভিযোগ
ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন,
“ক্লাবগুলো যদি বাতিল করা হয়, তাহলে সেটি হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। এখানে ক্লাবগুলোর কোনো দোষ নেই। তারা নিয়মিত খেলছে। আসলে কাউন্সিলরশিপ ঘিরে যা হচ্ছে, সবই অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। এনএসসি স্পষ্টতই অনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করছে। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।”
বিসিবি সভাপতির অবস্থান
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলও নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,
“আমরা এমন একটি প্রক্রিয়া চাই যেখানে প্রকৃত ও যোগ্য মানুষ ক্রিকেট পরিচালনায় আসতে পারে। তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের কাম্য নয়। সরকারের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।”
বিসিবি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিরুদ্ধে ওঠা হস্তক্ষেপের অভিযোগ নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে আসন্ন বিসিবি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। এখন ক্রিকেট সংগঠন, ক্লাব ও সংশ্লিষ্ট মহল তাকিয়ে আছে সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের দিকে—তারা কীভাবে সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখে।












One Response
সর্ব মোট দেখা হয়েছে: 15