রান্নার তেল নিয়ে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন আর শুধু দাম নয়, স্বাস্থ্যগত প্রভাবও অনেকেই বিবেচনা করেন। বাজারে সূর্যমুখী, র্যাপসিড, জলপাই, নারকেল, এমনকি অ্যাভোকাডো তেল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—কোন তেল আসলে আমাদের শরীরের জন্য ভালো, আর কোনটি রান্নার জন্য বেশি উপযোগী?
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক নীতা ফোরোহি সম্প্রতি বিবিসির এক আলোচনায় বলেন, “একক কোনো তেলকে স্বাস্থ্যকর বললে সেটা ভুল হবে। মূল বিষয় হলো—কীভাবে, কতটা, এবং কোন পরিস্থিতিতে আপনি তেল ব্যবহার করছেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ভিজ্জ ও সূর্যমুখী তেল স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এই তেলগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি, যা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। নিয়মিতভাবে এই তেল ব্যবহার করলে মাখন বা ঘির তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
একসময় মার্জারিনকে অনেকে ক্ষতিকর মনে করতেন, কারণ এতে ট্রান্স ফ্যাট থাকত। কিন্তু আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সেই ট্রান্স ফ্যাট প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। এখনকার মার্জারিন খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—প্রক্রিয়াজাত খাদ্য হোক বা মার্জারিন, পরিমিত পরিমাণেই গ্রহণ করা উচিত।
অন্যদিকে, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও এর ধোঁয়া বিন্দু কম—অর্থাৎ বেশি তাপে দ্রুত পুড়ে যায়। তাই এটি সালাদ, স্যুপ বা রান্না শেষে ফ্লেভার যোগ করার কাজে সবচেয়ে ভালো। উচ্চ তাপে রান্না বা ডিপ ফ্রাইয়ের জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
উচ্চ তাপে রান্নার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প হচ্ছে সূর্যমুখী বা সাধারণ উদ্ভিজ্জ তেল। এগুলোর ধোঁয়া বিন্দু বেশি, ফলে খাবার পোড়ে না এবং তেলের গঠনও নষ্ট হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের বৈচিত্র্যও গুরুত্বপূর্ণ—একই তেল প্রতিদিন ব্যবহার না করে প্রয়োজনে বিভিন্ন তেল পালাক্রমে ব্যবহার করলে শরীর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্য পায়।
প্রস্তাবিত ব্যবহার:
-
দৈনন্দিন রান্নায়: সূর্যমুখী বা র্যাপসিড তেল
-
সালাদ বা পরিবেশনের আগে: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
-
ডিপ ফ্রাইয়ে: উদ্ভিজ্জ বা সূর্যমুখী তেল
-
স্বাদের বৈচিত্র্যে: নারকেল, তিল বা অ্যাভোকাডো তেল
সর্বোপরি, তেলের পরিমাণ এবং প্রকার—দুইয়ের ভারসাম্যই স্বাস্থ্য রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রাখে বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।










