নিউইয়র্কের বহুল আলোচিত আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জোহরান মামদানি এবার পেলেন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকল-এর প্রকাশ্য সমর্থন। দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর হোকল অবশেষে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করলেন। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে এ সমর্থন মামদানির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
হোকলের অভিমত
রোববার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত এক মতামতধর্মী নিবন্ধে গভর্নর হোকল লেখেন, তিনি প্রাইমারিতে বিপুল বিজয়ের পর মামদানির সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। সেসব আলোচনায় তিনি আবিষ্কার করেছেন এক প্রতিশ্রুতিশীল নেতা—
- যিনি শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী,
- পরিবারকে সামগ্রিক সুবিধা দেওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থানে আছেন,
- এবং নিউইয়র্ককে সবার জন্য সাশ্রয়ী রাখার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মামদানির অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক অবস্থান
৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক রাজনীতিতে প্রগতিশীল শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর মূল প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- ভাড়া নিয়ন্ত্রিত বাসস্থানে ভাড়া বৃদ্ধি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা,
- এবং নগরবাসীর জন্য বিনামূল্যে গণপরিবহন সেবা চালু করা।
গত মে মাসের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানি ৫৬.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারান।
যদিও কট্টর ইসরায়েল সমর্থনের জন্য পরিচিত কুয়োমো নির্বাচনী লড়াই থেকে এখনও সরে দাঁড়াননি। তদুপরি, গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হয়ে আইনজীবী দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাঁর অবস্থান আরও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ জরিপ বলছে, সাধারণ ভোটারদের পছন্দের বিচারে মামদানি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ২২ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন।
তবুও ডেমোক্র্যাট শিবিরের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা—যেমন মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় নেতা চাক শুমার, প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস এবং কংগ্রেসম্যান রিচি টরেস—এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে সমর্থন জানাননি।
ডেমোক্র্যাটদের এই ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ অবস্থান নিয়ে সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন সমালোচনা জানিয়ে বলেন—
“আমেরিকান জনগণ মেরুদণ্ডহীন রাজনীতি আর দেখতে চায় না। এখনই সময় মামদানির পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবার।”
প্রগতিশীল শিবিরের শক্ত ঘাঁটি
মামদানি ইতোমধ্যে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয় নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
- সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স,
- কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ (AOC),
- এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য প্রমীলা জয়াপন।
এবার তাঁর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিলেন অপেক্ষাকৃত কেন্দ্রপন্থি নেতা ক্যাথি হোকলও। রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, এটি মামদানির জন্য একটি রাষ্ট্রীয় স্তরের কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি।
রিপাবলিকান প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক জরিপ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন—
“এটি খারাপ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্রোহ।”
তবে ডেমোক্র্যাটদের শিবিরে মামদানির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং রিপাবলিকানদের সমালোচনায় তা আরও দৃঢ় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন সামনে
আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কের এ বহুল আলোচিত মেয়র নির্বাচন।
গভর্নর হোকলের প্রকাশ্য সমর্থন, প্রগতিশীল শিবিরের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা এবং সাধারণ ভোটারদের জনপ্রিয়তা—সব মিলিয়ে মামদানির কেম্পেইনকে এখন নিউইয়র্ক রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনী ঘটনার কেন্দ্রে এনেছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—মামদানি কি সত্যিই নিউইয়র্ক সিটির প্রথম প্রগতিশীল মুসলিম মেয়র হতে যাচ্ছেন, নাকি নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের ভেতরের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তাঁর পথে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে?











