বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 8:21 pm
October 29, 2025 8:21 pm

জামায়াত কি তবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে?

Md. Asif Khan

ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তারা সরাসরি জানতে চান—আগামীতে জামায়াত যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়, তবে তাদের মূল এজেন্ডা কী হবে।

বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, দলের আমির তিনটি বিষয় ইইউ প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করেছেন—
১. শিক্ষাব্যবস্থাকে নৈতিক, উৎপাদনমুখী, কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ও মানবিক করা।
২. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন।
৩. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।

এখন প্রশ্ন উঠছে—এটি কি নিছক সৌজন্যবিনিময় ছিল, নাকি সত্যিই এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে যেখানে জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশীদার বা এমনকি সরকার গঠনকারী শক্তি হয়ে উঠতে পারে?

প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচনের আগে ইইউ প্রতিনিধি দল সবসময় বাংলাদেশ সফর করে এবং সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে। এবারও তারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। অনুমান করা যায়, বিএনপিকেও একই প্রশ্ন করা হয়েছে—ক্ষমতায় গেলে তাদের অগ্রাধিকার কী হবে।

তবে আগামী নির্বাচনের সময়সূচি ও ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের পতনের পরপর ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপি সহজেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিএনপির জন্য এখনকার নির্বাচনি বাস্তবতা অনেক কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনও তার ইঙ্গিত বহন করছে।

অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল যদি বৃহত্তর জোট গড়ে, তাহলে ভোটের মাঠে বিএনপিকে কঠিন চাপে ফেলতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যারা আকারে ছোট হলেও রাজনৈতিক প্রভাব রাখছে এবং বিএনপির বিপক্ষেই অবস্থান নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় বিএনপি শুধু আওয়ামী লীগ-বিরোধী ভোটের ওপর নির্ভর করলে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, তা অনিশ্চিত। বরং একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনের সম্ভাবনাই বেশি, যেখানে জামায়াত প্রধান স্টেকহোল্ডার হয়ে উঠতে পারে।

তাহলে কি সত্যিই জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে? মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অতীত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় সত্ত্বেও তারা কি এবার সরকার গঠনের অবস্থানে আসবে? এর দায় যেমন বিএনপির, যারা জামায়াতকে প্রথম ক্ষমতার অংশীদার করেছিল; তেমনি আওয়ামী লীগেরও, যারা রাজনৈতিক ও আদর্শিক মোকাবিলা না করে প্রশাসনিকভাবে নির্মূলের চেষ্টা করেছে।

গত ১৫ বছরে জামায়াত ধীরে ধীরে নিজেদের পুনর্গঠিত করেছে—এর প্রমাণ অভ্যুত্থানের পরবর্তী রাজনীতিতে স্পষ্ট। তরুণ প্রজন্মও প্রচলিত তিনটি বড় দলের ব্যর্থতায় নতুন বিকল্প খুঁজছে। সেই বিকল্প জামায়াত, এনসিপি নাকি অন্য কেউ হবে, তা সময়ই বলবে।

কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—শুধু ‘জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী দল’ বললেই আর ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না। জনগণ দুর্নীতি, অগণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাবে অতিষ্ঠ। ফলে সামনে যে নির্বাচন আসছে, সেটি অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে ভিন্ন ও অনিশ্চিত হতে বাধ্য।

অতএব আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর এখন থেকেই ভাবা উচিত—যদি সত্যিই জামায়াত বা অন্য কোনো ধর্মীয় জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তবে তারা কীভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষা করবে এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *