ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে কাশির সিরাপ ‘কোল্ডরিফ’ সেবনের পর ১ থেকে ৫ বছর বয়সী অন্তত ১৭ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কোল্ডরিফ সিরাপে ডায়েথিলিন গ্লাইকোল (Diethylene Glycol) নামের এক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেশি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই পদার্থ অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই ওষুধটি উৎপাদন করেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি. রঙ্গনাথনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মান নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যর্থতা
ভারতের প্রচলিত আইনে প্রতিটি ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে, শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস সেই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি কোনো ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করে না, বরং শুধুমাত্র ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেই বিক্রি করে, তবুও শিশুদের মৃত্যুর পর দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (DCGI) ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে।
সরকারের জরুরি পদক্ষেপ
ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী রাজীব রঘুবংশী ইতোমধ্যে বাজারে সহজলভ্য শিশুদের কফ সিরাপগুলোর মান যাচাই ও নিরাপত্তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে উজবেকিস্তান, গাম্বিয়া ও ক্যামেরুনে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির কফ সিরাপ সেবনে ১৪১ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল ২০২৩ সালে। সেই ঘটনার পরও আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ওষুধ শিল্পের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ফার্মাসিউটিক্যাল বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় ওষুধ উৎপাদক দেশ হলেও, গুণগত মান ও নিরাপত্তা তদারকির অভাব এখন বড় সংকটে পরিণত হচ্ছে। তারা বলছেন, “রপ্তানি নয়, ঘরোয়া বাজারের জন্য তৈরি ওষুধেও একই মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে — না হলে এই ট্র্যাজেডি বারবার ঘটবে।”











