করোনাকাল—যে সময়টা পৃথিবীজুড়ে থেমে গিয়েছিল জীবনের গতি। শহর নিস্তব্ধ, মানুষ ঘরবন্দী, প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় একের পর এক মৃত্যু সংবাদ। সেই অচেনা সময়ের আবহ এবার ধরা পড়েছে পিপলু আর খানের সিনেমা ‘জয়া ও শারমিন’-এ। ১৬ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর সিনেমাটি এখন দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।
একটি বাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ গল্প—কিন্তু মানসিক টানাপোড়েন, নিঃসঙ্গতা আর মানবিক সম্পর্কের জটিলতা এখানে যেন অনেক বড় পরিসরে ছড়িয়ে গেছে।
অভিনেত্রী জয়া (জয়া আহসান) ঘরবন্দী হয়ে পড়েন লকডাউনে। তাঁর একমাত্র সঙ্গী গৃহকর্মী শারমিন (মহসিনা আক্তার)। বাইরের পৃথিবী বন্ধ, কিন্তু ভেতরের জগতের দরজা একে একে খুলে যায়।
জয়ার হাতে আসে এক নতুন চরিত্র—একজন সদ্য প্রয়াত ব্যক্তির স্ত্রীর ভূমিকা। অভিনয়ের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব আর চরিত্রের সীমারেখা যেন মুছে যেতে থাকে। সেই সীমারেখা ভাঙার যন্ত্রণাই সিনেমার মূল উপজীব্য।
শারমিন চরিত্রে মহসিনা আক্তারের অভিনয় এ ছবির আসল শক্তি। তাঁর একাকিত্ব, ছেলেকে নিয়ে কথোপকথন, আর শেষের দিকের আত্মমোচন—সব মিলিয়ে পর্দায় তিনি এক গভীর অনুভূতির জন্ম দেন। জয়া আহসানও চিরচেনা অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন, তবে এই ছবিতে তিনি যেন আরও সংবেদনশীল, আরও নীরব।
চলচ্চিত্রটির ধীর গতি ও নিঃশব্দ আবহ দর্শককে টেনে নিয়ে যায় সেই অচল সময়ের ভেতরে—যখন ঘড়ির কাঁটাও যেন চলত ধীরে। সিনেমার নির্জনতা, সঙ্কীর্ণ জায়গা, আর দুজন নারীর পারস্পরিক দূরত্ব মিলিয়ে তৈরি হয় এক মনস্তাত্ত্বিক টানটান আবহ।
শেষের দিকে অন্বেষা দত্ত গুপ্তর কণ্ঠে গাওয়া গান ‘বেলগাছে পাতা কেন আসে না’—দেবজ্যোতি মিশ্রর সুরে—সিনেমার বিষণ্ন আবহকে আরও গভীর করে তোলে।
‘জয়া ও শারমিন’ শুধু লকডাউনের গল্প নয়; এটি দুই নারীর নীরব যুদ্ধে টিকে থাকার গল্প। মৃত্যু, একাকিত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা—সব মিলিয়ে এটি এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা।











