বিশ্বজুড়ে খবর, এক ক্লিকেই

October 29, 2025 8:22 pm
October 29, 2025 8:22 pm

গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সৌদি আরবের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

গাজা যুদ্ধের পরবর্তী বাস্তবতায় নেতৃত্ব নিতে আগ্রহী সৌদি আরব। দেশটি হামাসের প্রভাব হ্রাস করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে— এমন তথ্য উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে।

দলিল অনুসারে, সৌদি আরব গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে। এই বাহিনীতে সৌদি আরবের পাশাপাশি অন্যান্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রিয়াদ গাজার স্থিতিশীলতা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে একটি ‘পরিকল্পিত রোডম্যাপ’ তৈরি করেছে। এর অংশ হিসেবে হামাসকে রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তার মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়েছে। লক্ষ্য— ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

সৌদি আরব মনে করে, হামাসের অস্ত্রধারণ ও কঠোর অবস্থান শান্তি প্রচেষ্টার পথে বড় বাধা। তাই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে তাদের নিরস্ত্র করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

এছাড়া, ধীরে ধীরে গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে রিয়াদ। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে এই প্রক্রিয়াকে সরাসরি সংযুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মানাল বিনতে হাসান রাদওয়ানের নির্দেশনায় প্রস্তুত ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখা হবে।

২০০৭ সালের পর থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো প্রশাসনিক উপস্থিতি নেই। সেই বাস্তবতায় সৌদি আরব মনে করছে, ফাতাহ ও হামাসের বিভাজন দূর করে ঐক্যবদ্ধ প্রশাসন গঠন জরুরি।

প্রতিবেদনটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে— দুর্নীতি দমন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাকে প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি, ‘জাতীয় সংলাপ ও পুনর্মিলন প্রক্রিয়া’ শুরুর আহ্বান জানিয়ে সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা এই সংলাপের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আঞ্চলিক কর্মশালা ও বৈঠকের আয়োজন করবে।

যদিও প্রতিবেদনে হামাসকে এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই এবং ইসরায়েলের নামও একবারও আসেনি।

কূটনৈতিক পটভূমি

দলিলটির তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর। এর আগের দিনই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এরও আগে গ্রীষ্মকালে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে গাজার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিল, যেখানে যুদ্ধবিরতি, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ পুনরায় চালুর কথা বলা হয়।

তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতেই ওই প্রস্তাবের বেশ কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই চুক্তিতে বন্দি বিনিময় ও আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত থাকলেও হামাস নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব তারা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প সৌদি আরব, মিসর, তুরস্ক, কাতারসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আহ্বান জানান।

যুদ্ধবিরতির পর মিসরের শারম আল শেখে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ এতে অংশ নেননি। আঞ্চলিক সূত্রগুলো জানায়, তাদের অনুপস্থিতির কারণ ছিল চুক্তিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা না পাওয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি।

অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার বড় অংশ বহন করবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত— এমন ধারণাই এখন দৃঢ় হচ্ছে।

ইসরায়েলের অবস্থান

এদিকে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন, “সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করবে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা যদি মরুভূমিতে উট নিয়ে ঘোরে, তাতেই ভালো। আমরা আমাদের রাষ্ট্র ও অর্থনীতিকে আরও উন্নত করব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *